চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তথ্য মতে রিক্টার স্কেলে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬১ ভাগ ভবন ভেঙে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রামের ‘ভূমিকম্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: আমাদের করণীয় ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, রাতে সংঘটিত একটি ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করবে এবং প্রায় ৭ হাজার মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নিতে হবে। এক লাখেরও বেশি মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও অন্যান্য মেডিক্যাল সেবা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ ভগ্ন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়বে যাদের খুঁজে বের করে উদ্ধার করতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় চিহ্নিত খোলা স্থানগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন এবং আহত মানুষদের জন্য হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে বড় ধরনের ভূমিকম্পে বিভিন্ন হাসপাতালও ভেঙে পড়তে পারে। পানি, গ্যাস, বৈদ্যুতিক সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাগুলো ভূমিকম্পের সাথে সাথে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
শুক্রবার জিয়া স্মৃতি জাদুঘর মিলনায়তনে (পুরোনো সার্কিট হাউস) অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাপা চট্টগ্রামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা উইনির্ভাসিটির উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান। সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এবিএম আবু নোমানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপসহকারী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূমিকম্প থেকে আত্মরক্ষার উপায়ের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করেন। মতবিনিময় করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরীয়া, স্থপতি বিধান বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ, স্থপতি সুভাষ বড়ুয়া, জেসমিন সুলতানা পারু, অধ্যাপক হামিদুল হক সিদ্দিকী, অধ্যাপক ইউনুচ হাসান, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, ইঞ্জিনিয়ার এমদাদ, সিদ্দিকুল ইসলাম, মাহফুজুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এ নগরীতে প্রায় ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। অনিয়ন্ত্রিত বাসস্থান নির্মাণ, শিল্পায়ন ও লাগামহীন অর্থনৈতিক কার্যকলাপ চট্টগ্রাম শহরের ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানহীন অথবা অল্প মানসম্পন্ন বাসস্থান ও স্থাপনা নির্মাণ, নিম্নমানের অবকাঠামো চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের ফলাফলকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। ভূকম্পন এলাকার মানচিত্রে যদিও চট্টগ্রাম দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, পুনঃ পুনঃ কম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা জাগায়।
ভূমিকম্প মোকাবেলায় সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন এজেন্সি, কমিউনিটি, সরকারি এজেন্সি, কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় স্থাপন, সহনীয়, সক্ষম শহরের পরিকল্পনা ও প্রচারণা, অবকাঠামোগত, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার, প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলায় সক্ষমতা অর্জন, কমিউনিটি সতর্কতা বৃদ্ধি (মিডিয়া, তথ্যচিত্র), উন্নত নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা এবং ভূমিকম্প ও এর সম্ভাব্য ক্ষতির ওপর অধিক গবেষণা।